রবিবার, ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সকাল ৮:৪৮

শিরোনাম :
কথা দিচ্ছি আপনাদের সেবায় আমি সর্বদা পাশে থাকবো : চেয়ারম্যান প্রার্থী এসএম জাকির হোসেন উপজেলার উন্নয়নে আপনাদের পাশে আমি সর্বদা রয়েছি -ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী জসিম উদ্দিন মোটরসাইকেল প্রতিকের চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলা, আহত-২ সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়া কে এই জাকির হোসেন প্রচার-প্রচারণায় ভোটারদের মন জয় করছেন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী জসিম যারা আমার জন্য কাজ করেছে আমি তাদের রেখে কখনো পালিয়ে যাইনি-এসএম জাকির হোসেন রেমিটেন্স আহরণে রূপালী ব্যাংকের ২ দিন ব্যাপী ক্যাম্পেইন সম্পন্ন সদর উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী জসিম উদ্দিনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষনা বরিশালের দুই উপজেলায় বৈধতা পেলেন ২৫ প্রার্থী ঝালকাঠিতে বেপরোয়া ট্রাক কেড়ে নিল ১৪ প্রাণ
বরিশালে মাদক ব্যবাসায়ীদের ছবি তুলতে ডিবি পুলিশের বাঁধা, তথ্য দিতে গড়িমসি, সাংবাদিকদের ক্যামেরা ছিনতাই

বরিশালে মাদক ব্যবাসায়ীদের ছবি তুলতে ডিবি পুলিশের বাঁধা, তথ্য দিতে গড়িমসি, সাংবাদিকদের ক্যামেরা ছিনতাই

dynamic-sidebar

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বরিশাল নগরীর ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের চহুতপুর মুন্সি বাড়ির পেছনে বিআরটিসি’র কর্মচারী জালাল মিয়ার বাসায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমান ইয়াবা সহ তার ছেলে ইমরান হোসেন বাপ্পীকে দুই সহযোগীকে আটক করেছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে এই অভিযানের সময় আঞ্চলিক ৩টি দৈনিকের ৩জন সাংবাদিক ছবি তুলতে গেলে গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা তাদের হাত থেকে ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে ছবি মুছে ফেলে ডিবি পুলিশের এসআই নিপেন। এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্তিত সাংবাদিকদের সাথেও অশোভন আচরন করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। আলোচিত সেই ইউএনও তারিক সালমানের সাথে অশোভন আচরন করে বরখাস্ত হয়েছিল এসআই নিপেন। এ সময় বাপ্পীর বাবা বিআরটিসি’র কর্মচারী জালাল মিয়া সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আমার পোলায় আর হ্যার দুই বন্ধু ১০পিস (ইয়াবা) লইয়া খাইতে বইছে। হ্যাতে পুলিশ আইছে, আবার আমানেগোও আওয়া লাগে ? আঞ্চলিক নৈদিক বরিশাল প্রতিদিনের ফটো সাংবাদিক মো. মনিরুজ্জামান খান জানান, সোর্সের মাধ্যমে খবর পেয়ে তারা ৩জন সাংবাদিক চহুতপুর মুন্সি বাড়ির পেছনে বিআরটিসি’র কর্মচারী জালাল মিয়ার বাড়ি যান। এর আগেই এসআই নিপেনের নেতৃত্বে ডিবি পুলিশের ৯ সদস্যের একটি দল ওই বাসায় ঢুকে বিপুল পরিমান ইয়াবা সহ ইমরান হোসেন বাপ্পী এবং তার দুই সহযোগীকে আটক করে। এ সময় তারা ওই বাসায় ঢুকতে গেলে গোয়েন্দা পুলিশ তাদের বাঁধা দেয় এবং নগর গোয়েন্দা অফিস থেকে ই-মেইল পাঠিয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়ে দেয়া হবে বলে জানানো হয় তাদের। পুলিশের কথাবার্তায় সন্দেহ হওয়ায় তারা ওই বাড়ির অদুরে অপেক্ষা করতে থাকেন। বেলা ১২টার দিকে একটি লাল ব্যাগ (ইয়াবা) হাতে নিয়ে বাপ্পী সহ ৩জনকে হাতকড়া পড়িয়ে ওই বাসা থেকে বের করে নিয়ে যেতে থাকে গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা। অদুরে অপেক্ষমান ৩ সাংবাদিক এই ছবি তোলেন।

আঞ্চলিক দৈনিক ভোরের অঙ্গিকারের স্টাফ রিপোর্টার মো. ইমরান হোসেন অভিযোগ করেন, হাতকড়া পড়িয়ে ৩ আসামী সহ একটি লাল ব্যাগ নিয়ে যাওয়ার ছবি ফটো সাংবাদিক মনিরুজ্জামান ক্যামেরাবন্দি করার সাথে সাথে গোয়েন্দা পুলিশ সদস্যরা হায়েনার মতো তার উপর ঝঁপিয়ে পড়েন এবং তার ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়। ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার পর গোয়েন্দা পুলিশ সদস্যরা ওই স্থানে তোলা সকল ছবি মুছে ফেলেন বলে অভিযোগ করেন ফটো সাংবাদিক ইমরান। এ সময় অপর দুই ফটো সাংবাদিক ক্যামেরা বের করতে চাইলে তাদেরও বাঁধা দেয় গোয়েন্দা পুলিশ সদস্যরা।

ফটো সাংবাদিক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, গোয়েন্দা পুলিশ যদি কোথাও মাদকের অভিযান করে, তাহলে সংবাদ কর্মী হিসেবে তারা কেন সেখানে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ কিংবা ছবি তুলতে পারবেন না। মাদক সহ আটকের ছবি তোলার সময় তাদের ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে ছবি মুছে ফেলায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

স্থানীয় দৈনিক বাংলাদেশ বানীর স্টাফ রিপোর্টার এইচএম হেলালের অভিযোগ, মাদক সহ আটকের ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে গোয়েন্দা পুলিশ বাঁধা সৃস্টি করে। তারা সাংবাদিকদের ওই ঘরে ঢুকতে না দিয়ে ঘরের দরজা আটকে ইমরান হোসেন বাপ্পীর পরিবারের সাথে দির্ঘক্ষন আপোষরফা করে বলে অভিযোগ তার।

ঘটনার শিকার ফটো সাংবাদিকরা বলেন, স্থানীয় সোর্সের মাধ্যমে খবর পেয়ে তারা সেখানে গিয়েছিলেন। সোর্সের দেওয়া খবর অনুযায়ী ওই ঘর থেকে ২৪০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে। ২মাস আগে ইমরান হোসেন বাপ্পী ইয়াবা সহ গোয়েন্দা পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর ১ লাখ টাকার বিনিময়ে ছাড়া পায়। এ ঘটনার কয়েকদিন পর সে আবারও মাদক সহ আটক হয়। এবার আদালত থেকে জামিন পাওয়ার কয়েকদিন পর গতকাল আবারও গোয়েন্দা পুলিশের হাতে আটক হলো।

আঞ্চলিক দৈনিক বরিশাল প্রতিদিনের সম্পাদক কাজী মফিজুল ইসলাম কামাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী মাদকের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স। সেখানে মাদকের সাথে পুলিশের সংশ্লিস্টতা গ্রহনযোগ্য নয়। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের কাছ থেকে ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে ছবি মুছে ফেলা চরম অন্যায়। এটা মেটেই আইন সিদ্ধ নয়। এ বিষয়ে পুলিশ কমিশনারের সু-দৃস্টি কামনা করেন তিনি।

অভিযানে নেতৃত্বদানকারী নগর গোয়েন্দা পুলিশের এসআই নিপেন সাংবাদিকের ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে ছবি মুছে ফেলার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ওই অভিযানে ইমরান হোসেন বাপ্পী এবং তার দুই সহযোগীকে ১৫৫পিস ইয়াবা সহ আটক করা হয়। বাপ্পীর বিরুদ্ধে তিনি নিজে বাদী হয়ে মাদক আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন এবং বাপ্পীর দুই সহযোগীকে বিএমপি এ্যাক্টে গ্রেফতার দেখিয়ে থানায় সোপর্দ করেছেন। বিপুল পরিমান ইয়াবা উদ্ধার করে মাত্র ১৫৫পিস জব্দ দেখানোর বিষয়টি ভিত্তিহীন বলে দাবী করেন এসআই নিপেন।

এ ব্যাপারে বরিশাল ডিবি পুলিশের এসি সাখাওয়াত হোসেন জানান-ফটো সাংবাদিকের ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে মাদক ব্যবসায়ীর ছবি ডিলিট করার বিষয়টি তিনি জানেন না। কিছুদিন পূর্বে এসআই নিপেন ডিবি পুলিশে যোগদান করেছে। নতুন হওয়ায় সংবাদিকদের সাথে কোন অসাধাচরন করলে অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য ডিবি পুলিশের এই এসআই নিপেন সেই আলোচিত ইউনও তারিক সালমানের সাথে অশোভন আচরন করেও কিছুদিন বরখাস্ত ছিল। এর পরই ডিবি অফিসে যোগদান করে সম্প্রতি। সম্প্রতিক বরিশাল মেট্রেপলিটন পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে নগরীকে মাদক মুক্ত করতে মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে সাড়াশি অভিযান চালাচ্ছে ডিবি পুলিশ। তবে মাদক ব্যবসায়ীদের তথ্য দিতে প্রায়শই গড়িমসি করে ডিবি পুলিশের সংশ্লিষ্ট এসআই ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। গত ২২ সেপ্টেম্বর নগরীর রূপাতলী বিদ্যুত বিভাগের রেস্ট হাউস থেকে ইয়াবাসহ এক পুলিশ সদস্য ও দুই মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে পুলিশ। সকাল ৮ টায় আটকের পর রাত ১১ টায় পর্যন্ত আটকের বিষয়টি অস্বীকার করে ডিবি পুলিশের কর্মকর্তারা। পরে পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে এসব অপরাধীদের তথ্য সাংবাদিকের সরবরাহ করে কোতয়ালী থানা পুলিশ। পরে অবশ্য ডিবি পুলিশও পত্রিকা অফিসে মেইল পাঠিয়ে আটকের বিষয়টি শিকার করে। এরপূর্বে মাদকসহ আটকের এক মাদক ব্যবসায়ীর তথ্য সংগ্রহে ডিবি অফিসে গেলে সেখান থেকে সাংবাদিকদের সাথে অশোভন আচরন করা হয়। এবং জানানো হয় ডিবি পুলিশের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিশেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। বিষয়টি ডিবি পুলিশের এসিও স্বীকারে করেছেন। ডিবি পুলিশের অভিযানের খবর পেয়ে সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে উপস্তিত হলে সাংবাদিকদের সাথে অশোভন আচরনের অভিযোগ উঠেছে সাম্প্রতিক। মাদকসহ আটকের খবর পত্রিকা অফিসে মেইলে পাঠানোর কথা বললেও অনেক ঘটনারই ডিবি অফিস থেকে মেইলে পাঠানো হয়না। এসব বিষয়ে পুলিশ কমিশনারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সাংবাদিকরা।
সংগ্রহীত………বরিশাল ক্রাইম নিউজ

আমাদের ফেসবুক পাতা

© All rights reserved © 2018 DailykhoborBarisal24.com

Desing & Developed BY EngineerBD.Net